স্টাফ রিপোর্টার: বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এক কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যের একটি গোপন ভিডিওচিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার কনস্টেবল (বকশী) ওই ঘুষ বাণিজ্যের রফাদফার মধ্যস্তততা করেছেন। এ ঘটনায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপায়ন বড়াল ও কনস্টেবল বকশী সুশান্তকে ক্লোজড করা হয়েছে। গতকাল রাতে তাদেরকে থানা থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ মো. আওলাদ হোসেন মামুন। তিনি বলেন, ব্যক্তি পুলিশ যদি কোন অপরাধ করেন সে দায় তার। ব্যাক্তির দায়ভারতো কোতয়ালী থানার সমস্ত পুলিশ সদস্যর নয়। জানা গেছ, ওই মামলাটির চার্জশিট আদালতে জমা দেয়ার পরও অভিযুক্তদের কাছে ঘুষ দাবি করা হচ্ছে।
বুধবার (১১ জুলাই) বরিশাল শহরের একটি রেস্তোরাঁয় রফাদফার সেই ভিডিওচিত্র প্রকাশ পেলে শুরু হয় আলোচনা। ওই ভিডিওচিত্রে প্রকাশ পেয়েছে, বকশি ১২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করছেন। যদিও দাবির ১২ হাজার টাকার ১০ হাজার টাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দীপায়ন হস্তগত করতে চেয়েছিল। অবশ্য এই বিষয়ে শহরের কোন এক জায়গা থেকে ফোন করে বকশীকে দিক নির্দেশনাও দিচ্ছিলেন দীপায়ন। কিন্তু আদালতে চার্জশিট দেয়ার পরে পুলিশ বদলাতে পারে কিনা বা সেখান আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার কোন ক্ষমতা রাখে কিনা এই সন্দেহে ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন অভিযুক্ত মাওলানা কামাল হোসেন। এই রফাদফার ভিডিও ছাড়াও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপায়ন টাকা দাবি করার একটি অডিও প্রকাশ পেয়েছে। ভিডিও অডিওর দুটি ক্লিপ এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। অবশ্য এই ঘটনায় চার্জশিটে অভিযুক্ত মাওলানা কামাল হোসেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর এসআই ও বকশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে শাস্তি দাবি করেছেন। অভিযোগকারি বরিশাল শহরের সাগরদী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, একই এলাকার ইব্রাহিম মানিক ওঁঝা চলতি বছরের ২৮ মার্চ বরিশাল আদালতে তাকেসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন।
৩৮৫/৩৮৭/৩২৩/৩২৪/৩০৭ ও ১৪৩ সহ ৭টি ধারায় সংশ্লিষ্ট আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতয়ালি পুলিশের ওসিকে এজাহারভুক্ত করার আদেশ দেন। পরবর্তীতে থানা থেকে এই মামলাটির তদন্তভার এসআই দীপায়নকে দেয়া হলে শুরু হয় নাটকীয়তা। এই কর্মকর্তা সাম্প্রতিকালে অভিযুক্ত কামামল হোসেনকে জানিয়ে দেন আদালতে তাদের অভিযুক্তকরে চার্জশিট দেয়ার বিষয়টি। কিন্তু তিনি এই বিষয়টিকে পুঁজি করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেয়ার সংকল্প নেন। যেখানে মধ্যস্তততাকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ওই থানার বকশী সুশান্তকে। মূলত এসআই দীপায়নের দিকনির্দেশনা পেয়েই সুশান্ত গত বুধবার (১১ জুলাই) চার্জশিটে অভিযুক্ত কামাল হোসেনকে নিয়ে নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার কুটুম বাড়ি রেস্তোরাঁয় সমঝোতায় বসেন। এই পুরো বিষয়টি বাইরে থেকে কোন ব্যক্তি বিশেষ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- অভিযুক্তের সাথে আলাপচারিতার প্রাক্কালে বকশী সুশান্ত এসআই দীপায়নকে প্রতিটি মুহূর্তের আপডেট জানিয়ে দিচ্ছেন।
একপর্যায়ে মামলাটির ধারা কমিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বকশী জনপ্রতি নিজের জন্য ২ হাজার ও এসআই দীপায়নের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। অর্থাৎ এই ঘটনায় ৬ অভিযুক্তের কাছ থেকে ৭২ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। এমনকি বাকি ৫ অভিযুক্তকে এসআই দীপায়নের সাথে সরাসরি দেখা করার পরামর্শ দেন সুশান্ত। এই পুরো বিষয়টি বকশী স্বীকার করেছেন। তবে তার চাকুরি চলে যাওয়ার শঙ্কা জানিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার অনুরোধ রাখেন। কিন্তু পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে এসআই দীপায়ন বলছেন- অপরাধ করলে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার বিরুদ্ধে যে শাস্তি দিবেন তা মেনে নিবেন।
Leave a Reply